রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট কবিতা

৩৪। ছুটির দিনে

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

এ দেখো মা, আকাশ ছেয়ে

মিলিয়ে এল আলো;
আজকে আমার ছুটোছুটি

লাগল না আর ভালো ।
ঘণ্টা বেজে.গেল কখন্‌

_ অনেক হোলো বেলা,

তোমায় মনে পড়ে গেল

ফেলে এলেম খেলা ।.

আজকে আমার ছুটি, আমার
শনিবারের ছুটি
কাজ যা.আছে সব রেখে আয়
মা, তোর পায়ে লুটি ॥
দ্বারের কাছে এই খানে বোস্‌
এই হেথা চৌকাঠ ;
বল্‌ সামারে কোথায় আছে
তেপান্তরের মাঠ

এ দেখো মা, বর্ষ এল

ঘনঘটায় ঘিরে
বিজুলি ধায় একে বেঁকে

আকাশ চিরে চিরে ।
দেবতা যখন ডেকে ওঠে

থর্থরিয়ে কেপে
ভয় করতেই ভালবাসি

তোমায় বুকে চেপে।
ঝুপঝুপিয়ে বুষ্টি যখন

বাশের বনে পড়ে
কথ। শুনতে ভালবাসি

বসে কোণের ঘরে ।

এ দেখো মা, জান্ল। দিয়ে
আসে জলের ছাট,

বল্‌ গে! আমায় কোথায়’ আছে

তেপাস্তরের মাঠ।

কোন্‌ সাগরের তীরে মা গে৷

কোন্‌ পাহাড়ের পারে,
কোন্‌ রাজাদের দেশে মা গে

কোন্‌ নদীটির ধারে ।
কোনোখানে আল বাধা তার

নাই ডাইনে বায়ে
পথ দিয়ে তার সন্ধ্যে বেলায়

পৌঁছে না কেউ গায়ে?
সারাদিন কি ধুধু করে

শুকৃনো ঘাসের জমি ।
একট। গাছে থাকে শুধু

ব্যাঙ্গমা-বেঙ্গমি ?

সেখান দিয়ে কাঠকুড়,নি

যায়না নিয়ে কাঠ?
বল্‌ গে! আমায় কোথায় আছে
তেপাস্তরের মাঠ ।

এমনিতরেো। মেঘ করেছে

সারা আকাশ ব্যেপে,
রাজপুত্তর যাচ্ছে মাঠে

একুল। ঘোড়ায় চেপে ।
গজমোতির মালাটি তার

বুকের পরে নাচে,
রাজকন্তা কোথায় আছে

খোজ পেলে কার কাছে ।
মেঘে যখন ঝিলিক মারে

আকাশের এই কোণে,
ছয়োরানী-মায়ের কথা |

পড়ে না তার মনে ?
ছুখিনী মা গোয়াল ঘরে

দিচ্ছে এখন ঝট,
রাজপুত্তর চলে-যে কোন্‌

তেপাস্তরের মাঠ ।

এ দেখ, মা গায়ের পথে
রোদ নাইকো মোটে ;
রাখাল-ছেলে সকাল ক’রে
ফিরেছে আজ গোঠে।

আজকে দেখো রাত হয়েছে

দিন না যেতে যেতে,
কৃষাণেরা বসে আছে

দাওয়ায় মাছর পেতে ।
আজকে আমি নুকিয়েছি মা,

পুথি-পত্তর যত,__
পড়ার কথা আজ বোলো না।

যখন বাবার মতো
বড়ে। হব, তখন আমি

পড়ব প্রথম পাঠ,_-
আজ বলো মা, কোথায় আছে

তেপান্তরের মাঠ।


Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *