রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট কবিতা

৩২। মাঝি

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আমার যেতে ইচ্ছে করে
নদীটির এ পারে-_
যেথায় ধারে ধারে
বাশের খোটায় ডিডি নৌকো?
বাধা সারে সারে।
কৃষাণেরা পার হয়ে যায়
লাঙল কাধে ফেলে;
জাল টেনে নেয় জেলে:
গোরু মহিষ সাতরে নিয়ে
যায় রাখালের ছেলে ।

সন্ধ্যে হোলে সেখান থেকে
সবাই ফেরে ঘরে;
শুধু রাতছুপরে

শেয়ালগুলো। ডেকে উঠে
ঝাউ-ডাঙাটার পরে ॥
মা, যদি হও রাজি

বড়ো হোলে আমি হব
খেয়াঘাটের মাঝি ।

শুনেছি ওর ভিতর দিকে
আছে জলার মতো ।
বরা হোলে গত

ঝাকে ঝাকে আসে সেথায়
চখাচখী যত ।

তারি ধারে ঘন হয়ে
জন্মেছে সব শর;
মানিকজোড়ের ঘর,

কাদাখোচ। পায়ের চিহু
আকে পাকের পর।

সন্ধ্যা হোলে কত দিন মা,
দাড়িয়ে ছাদের কোণে
দেখেছি এক মনে-_
চাঁদের আলো লুটিয়ে পড়ে
সাদা কাশের বনে।
মা, যদি হও রাজি
বড়ো হোলে আমি হব
. খেয়াঘাটের মাঝি ।

এ-পার ও-পার ছুই পাঁরেতেই
যাব নৌকো বেয়ে ।
যত ছেলে মেয়ে
স্লানের ঘাটে থেকে আমায়
দেখবে চেয়ে চেয়ে ।

সুর্য যখন উঠবে মাথায়
অনেক বেলা হোলে-_
আসব তখন চলে

“বড়ে। খিদে পেয়েছে গে!
খেতে দাও মা”, ঝলে।

আবার আমি আসব ফিরে,
আধার হোলে সাঝে
তোমার ঘরের মাঝে ।

বাবার মতো যাব না ম।
বিদেশে কোন্‌ কাজে ।
মা, যদি হও রাজি

বড়ো হোলে আমি হব
খেয়াঘাটের মাঝি ॥


Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *