২৪। বিম্ববতী
( রূপকথা )
স্যত্বে সাজিল রানী, বাধিল কবরী,
নবঘন-লিপ্ধবর্ণ নব নীলাম্বরী
পরিল অনেক সাধে । তার পরে ধীরে
গুপ্ত আবরণ খুলি আনিল বাহিরে
মায়াময় কনক দর্পণ । মন্ত্র পড়ি
শুধাইল তারে–“কহ মোরে সত্য করি:
সবশ্রেষ্ঠ রূপসী কে ধরায় বিরাজে |”
ফুটিয়া উঠিল ধীরে যুকুরের মাঝে
মধুমাখা হাসি-আকা। একখানি মুখ,
দেখিয়া বিদারি গেল মহিষীর বুক-_
রাজকন্যা! বিম্ববতী সতীনের মেয়ে ।
ধরাতলে রূপসী সে সবাকার চেয়ে ।
তার পরদিন রানী প্রবালের হার
প্রিল গলায়। খুলি দিল কেশভার
আজান্তলম্বিত। গোলাপী অঞ্চলখানি,
লজ্জার আভাসসম, বক্ষে দিল টানি।
স্বর্ণ মুকুর রাখি কোলের উপরে
শুধাইল মন্ত্র পড়ি” -“কহ সত্য করে
ধরামাঝে সব চেয়ে কে আজি রূপসী |”
দর্পণে উঠিল ফুটি” সেই সুখশশী ।
কাপিয়া কহিল রানী, অগ্নিসম জআ্বাল।-_
পরালেম আমি তারে বিষফুলমালা,
তবু মরিল না জ্বলে সতীনের মেয়ে,
ধরাতালে রূপসী সে সকলের চেয়ে।
তার পরদিনে,__-আবার রুধিল দ্বার
শয়নমন্দিরে । পড়িল মুক্তার হার,
ভালে সিন্দুরের টিপ, নয়নে কাজল,
রক্তাম্বর পট্টবাস, সোনার আচল ।
শুধাইল দপণেরে–কহ সতা করি
ধরাতলে সব চেয়ে কে আজি সুন্দরী |”
উজ্জ্বল কনক-পটে ফুটিয়। উঠিল
সেই হাসিমাখা মুখ । হিংসায় লুটিল
রানী শয্যার উপরে । কহিল কাদিয়া__
“বনে পাঠালেম তা”রে কঠিন বাঁধিয়া,
এখনে। সে মরিল না সতীনের মেয়ে,
ধরাতলে রূপসী সে সবাকার চেয়ে ”
তার পরদিন,–আবার সাজিল সুখে
নব অলংকারে, বিরচিল হাসিমুখে
কবরী নূতন ছাদে বাঁকাইয়! গ্রীবা ।
পরিল যতন করি নবরৌদ্রবিভা
নব পীতবাস। দর্পণ সম্মুখে ধরে
শুধাইল মন্ত্র পড়ি “সত্য কহ মোরে
ধরামাঝে সব চেয়ে কে আজি রূপসী ।”
সেই হাসি সেই মুখ উঠিল বিকশি
মোহন মুকুরে । রানী কহিল জ্বলিয়__
বিষফল খাওয়ীলেম তাহারে ছলিয়া,
তবুও সে মরিল ন। সতীনের মেয়ে,
ধরাতলে দূপসী সে সকলের চেয়ে ।
তার পরদিন রানী কনক রতনে
খচিত করিল তনু অনেক যতনে ।
দর্পণেরে শুধাইল বনু দর্পভরে-_
“সর্বশ্রেষ্ঠ রূপ কার বলো সত্য করে ।”
ছুইটি স্তুন্দর মুখ দেখা দিল হাসি
রাজপুত্র রাজকন্যা দৌহে পাশাপাশি
বিবাহের বেশে ।__অঙ্গে অঙ্গে শিরা যত
রানীরে দংশিল যেন বুশ্চিকের মতো ।
চীৎকারি” কহিল রানী কর হানি” বুকে”
“মরিতে দেখেছি তারে আপন সম্মুখে,
কার প্রেমে বাচিল সে সতীনের মেয়ে,
ধরাতলে রূপসী সে সকলের চেয়ে ।”
ঘসিতে লাগিল রানী কনক মুকুর
বালু দিয়ে__প্রতিবিষ্ব নাহি হোলে। দূর ।
মসী লেপি দিল তবু ছবি ঢাঁকিল না,
অগ্নি দিল তবুও তো গলিল না সোন|।
আছাড়ি ফেলিল ভূমে প্রাণপণ বলে,
ভাঙিল না সে মায়া-দর্পণ। ভূমিতলে
চকিতে পড়িল রানী, টুটি গেল প্রাণ ;
সবাঙ্গে হীরক-মণি অগ্নির সমান
লাগিল জ্বলিতে ; ভূমে পড়ি তারি পাশে
কনক দর্পণে ছুটি হাসিমুখ হাসে ।
বিশ্ববতী, মহিষীর সতীনের মেয়ে
ধরাতলে রূপসী সে সকলের চেয়ে ।
