রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট কবিতা

২২। বৃষ্টি পড়ে টাপুর্‌ টুপুর

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

দিনের আলো নিবে এল, এ. এ
সুয্যি ডোবে-ডোবে। |
আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে
চাদের লোভে-লোভে।
মেঘের উপর মেঘ করেছে
রঙের উপর রং,
মন্দিরেতে কাসর ঘণ্ট।
বাজল ঠং ঠং।
ও-পারেতে বিষ্টি এল,
ঝাপসা গাছপালা ।
এ-পারেতে মেঘের মাথায়
একশো মানিক জ্বালা ।
বাদল।-হাওয়ায় মনে পড়ে
ছেলেবেলার গান-_
“বিষ্টি পড়ে টাপুর্‌ টুপুর
নদেয় এল বান্‌ ॥”

আকাশ জুড়ে’ মেঘের খেল
কোথায় বা সীমানা ।
দেশে দেশে খেলে বেড়ায়
কেউ করে ন৷ মানা ।

কত নতুন ফুলের বনে

বিষ্টি দিয়ে যায়,
পলে পলে নতুন খেলা

কোথায় ভেবে পাম ।
মেঘের খেল। দেখে কত

খেলা পড়ে মনে
কত দিনের নুকোচুরি

কত ঘরের কোণে
তারি সঙ্গে মনে পড়ে

ছেলেবেলার গান-_
“বিষ্টি পড়ে টাপুর্‌ টুপুর্‌

নদে এল বান ॥

মনে পড়ে ঘরটি আলে।

মায়ের হাসিমুখ,
মনে পড়ে মেঘের ডাকে

গুরুগুরু বুক ।
বিছানাটির একটি পাশে

শ্বুমিয়ে আছে খোকা,

মায়ের ‘পরে দৌরাত্মি, সে

না যায় লেখাজোখা।

স্বরেতে দুরস্ত ছেলে

করে দাপাদাপি,
বাইরেতে মেঘ ডেকে ওঠে

স্ষ্টি ওঠে কাপি।
মনে পড়ে মায়ের মুখে

শুনেছিলেম গান-_
“বিষ্টি পড়ে টাপুর্‌ টুপুর্‌

নদেয় এল বান।”

মনে পড়ে স্থুয়োরানী

ছয়োরানীর কথা,
মনে পড়ে অভিমানী

ক্কাবতীর ব্যথ1।
মনে পড়ে ঘরের কোণে

মিটিমিটি আলো,
একট দিকের দেয়ালেতে

ছায়া কালো কালে ।
বাইরে কেবল জলের শব্দ

“দস্তি ছেলে গল্প শুনে

একেবারে চুপ ।

তারি সঙ্গে মনে পড়ে
মেঘলা দিনের গান-_-

নদেয় এল বান ॥

কবে বিষ্টি পড়েছিল,
বান এল সে কোথা ।

শিবঠাকুরের বিয়ে ভোলো

কবেকার সে কথা ।
সেদিনো কি এম্নিতাঁরো .

মেঘের ঘটাখানা |
থেকে থেকে বাজ বিজুলি

দিচ্ছিল কি হান] ।
তিন কন্তে বিয়ে ক’রে

কী হোলো তার শেষে ।
না জানি কোন্‌ নদীর ধারে,

না জানি কোন্‌ দেশে,
কোন্‌ ছেলেরে ঘ্বুম পাড়াতে

কে গাহিল গান-_
“বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর

নদেয় এল বান ॥


Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *