নববর্ষের কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বাঙালিদের নানান অনুঠানের মধ্যে অন্যতম অনুষ্ঠান হলো নববর্ষ। নববর্ষ বলতে বিশেষ করে বাঙালিদের কাছে বাংলা বৎসরের প্রথম দিনটিকে বোঝায়। আর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তা নিয়ে কবিতা লিখবেন না তা কখনো হয়। তিনি অনেক কবিতার মাঝে নববর্ষ সম্পর্কে যে সুন্দর কবিতাগুলি উপহার দিয়েছেন তা নিচে দেওয়া হলো।

২টি বিখ্যাত নববর্ষের কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের

নববর্ষ এল আজি

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

নববর্ষ এল আজি
দুর্যোগের ঘন অন্ধকারে;
আনে নি আশার বাণী,
দেবে না সে করুণ প্রশ্রয়;
প্রতিকূল ভাগ্য আসে
হিংস্র বিভীষিকার আকারে—
তখনি সে অকল্যাণ
যখনি তাহারে করি ভয়।
যে জীবন বহিয়াছি
পূর্ণ মূল্যে আজ হোক কেনা;
দুর্দিনে নির্ভীক বীর্যে
শোধ করি তার শেষ দেনা।

(স্ফুলিঙ্গ কাব্যগ্রন্থ)

নব বৎসরে করিলাম পণ

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

নব বৎসরে করিলাম পণ–
লব স্বদেশের দীক্ষা,
তব আশ্রমে তোমার চরণে
হে ভারত, লব শিক্ষা।
পরের ভূষণ পরের বসন
তেয়াগিব আজ পরের অশন;
যদি হই দীন, না হইব হীন,
ছাড়িব পরের ভিক্ষা।
নব বৎসরে করিলাম পণ–
লব স্বদেশের দীক্ষা।

না থাকে প্রাসাদ, আছে তো কুটির
কল্যাণে সুপবিত্র।
না থাকে নগর, আছে তব বন
ফলে ফুলে সুবিচিত্র।
তোমা হতে যত দূরে গেছি সরে
তোমারে দেখেছি তত ছোটো করে;
কাছে দেখি আজ হে হৃদয়রাজ,
তুমি পুরাতন মিত্র।
হে তাপস, তব পর্ণকুটির
কল্যাণে সুপবিত্র।

পরের বাক্যে তব পর হয়ে
দিয়েছি পেয়েছি লজ্জা।
তোমারে ভুলিতে ফিরায়েছি মুখ,
পরেছি পরের সজ্জা।
কিছু নাহি গণি কিছু নাহি কহি
জপিছ মন্ত্র অন্তরে রহি–
তব সনাতন ধ্যানের আসন
মোদের অস্থিমজ্জা।
পরের বুলিতে তোমারে ভুলিতে
দিয়েছি পেয়েছি লজ্জা।

সে-সকল লাজ তেয়াগিব আজ,
লইব তোমার দীক্ষা।
তব পদতলে বসিয়া বিরলে
শিখিব তোমার শিক্ষা।
তোমার ধর্ম, তোমার কর্ম,
তব মন্ত্রের গভীর মর্ম
লইব তুলিয়া সকল ভুলিয়া
ছাড়িয়া পরের ভিক্ষা।
তব গৌরবে গরব মানিব,
লইব তোমার দীক্ষা।

(উৎসর্গ কাব্যগ্রন্থ)

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *