 
		কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রার্থনা কবিতা নামে তিনটি কবিতা লিখেছেন। প্রার্থনা কবিতা গুলিতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। যাই হোক তার আগে আমাদের জানা দরকার প্রার্থনা আসলে কি ?
প্রার্থনা আসলে কি?
প্রার্থনা শুধু মানুষ ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগ নয়; এটা মানুষ এবং ঈশ্বরের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ। ঈশ্বর এবং মানুষের মধ্যে যোগাযোগের এই বিষয়টি একটি খুব বড় বিষয়। আমরা প্রায়শই বলেছি যে মানুষের বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য হল ঈশ্বরের পাত্র হওয়া।
মহাবিশ্বে ঈশ্বর মানুষের বিষয়বস্তু, এবং মানুষ ঈশ্বরের ধারক। মানুষ ব্যতীত, ঈশ্বরের নিজেকে রাখার কোন জায়গা নেই – তিনি একজন গৃহহীন ঈশ্বরে পরিণত হন। আমি বুঝতে পারছি না কেন এমন হয়, তবে আমি জানি যে এটি একটি বাস্তবতা।
মহাবিশ্বে ঈশ্বরের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন মানুষ। ঈশ্বর নিজেই একটি সত্তা হিসাবে সম্পূর্ণ, কিন্তু যতদূর মহাবিশ্বে তাঁর ক্রিয়াকলাপ উদ্বিগ্ন, সেই ক্রিয়াকলাপটি পূরণ করার জন্য তাঁর এখনও মানুষের প্রয়োজন।
এই শব্দটি বোঝার ক্ষেত্রে আমাদের সকলকে খুব সতর্ক থাকতে হবে, কারণ এটি ধর্মতত্ত্বে প্রবল তর্ক জাগিয়ে তুলতে পারে। আমি বলতে চাই না যে ঈশ্বর অসম্পূর্ণ এবং তাকে সম্পূর্ণ করার জন্য মানুষের প্রয়োজন। আমি যা বলতে চাচ্ছি তা হল ঈশ্বর সম্পূর্ণরূপে সম্পূর্ণ, কিন্তু মানুষ ছাড়া তিনি তাঁর পরিকল্পনা অনুসারে মহাবিশ্বে সম্পূর্ণ নন। ওহ, ভাই ও বোনেরা, ব্যাপারটা খুবই গৌরবময়।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর প্রার্থনা কবিতা গুলিতে এই কথায় আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন। প্রার্থনা কবিতা গুলি নিচে দেওয়া হল।
প্রার্থনা কবিতা | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১। প্রার্থনা
চিত্ত যেথা ভয়শূণ্য, উচ্চ যেথা শির,
জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর
আপন প্রাঙ্গণতলে দিবসশর্বরী
বসুধারে রাখে নাই খন্ড ক্ষুদ্র করি,
যেথা বাক্য হৃদয়ের উৎসমুখ হতে
উচ্ছ্বাসিয়া উঠে, যেথা নির্বারিত স্রোতে
দেশে দেশে দিশে দিশে কর্মধারা ধায়
অজস্র সহস্রবিধ চরিতার্থতায়,
যেথা তুচ্ছ আচারের মরুবালুরাশি
বিচারের স্রোতঃপথ ফেলে নাই গ্রাসি-
পৌরুষেরে করে নি শতধা, নিত্য যেথা
তুমি সর্ব কর্ম চিন্তা আনন্দের নেতা,
নিজ হস্তে নির্দয় আঘাত করি, পিতঃ,
ভারতেরে সেই স্বর্গে করো জাগরিত।।

 
			 
			 
			 
			