স্বপ্ন নিয়ে কবিতা

স্বপ্ন হলো মানব মস্তিষ্কের একটি ভাবনা, কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেই ভাবনা স্বপ্ন নিয়ে কবিতা গুলিতে তুলে ধরেছেন। এখন জেনে নেওয়া যাক স্বপ্ন কি।

স্বপ্ন আসলে কি?

একটি স্বপ্ন হল ইমেজ, ধারণা, আবেগ এবং সংবেদনগুলির একটি উত্তরাধিকার যা সাধারণত ঘুমের নির্দিষ্ট পর্যায়ে মনের মধ্যে অনিচ্ছাকৃতভাবে ঘটে। মানুষ প্রতি রাতে প্রায় দুই ঘন্টা স্বপ্ন দেখতে ব্যয় করে এবং প্রতিটি স্বপ্ন প্রায় ৫ থেকে ২০ মিনিট স্থায়ী হয়।

নথিভুক্ত ইতিহাস জুড়ে স্বপ্নের বিষয়বস্তু এবং কার্যকারিতা বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক এবং ধর্মীয় আগ্রহের বিষয়। স্বপ্নের ব্যাখ্যা, খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দে ব্যাবিলনীয়দের দ্বারা অনুশীলন করা হয়েছিল এবং এমনকি প্রাচীন সুমেরীয়দের দ্বারা, বিভিন্ন ঐতিহ্যের ধর্মীয় গ্রন্থে বিশিষ্টভাবে চিত্রিত হয়েছে এবং সাইকোথেরাপিতে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। স্বপ্নের বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে বলা হয় ওয়ানইরোলজি।

বেশিরভাগ আধুনিক স্বপ্ন অধ্যয়ন স্বপ্নের নিউরোফিজিওলজির উপর এবং স্বপ্নের ফাংশন সম্পর্কিত হাইপোথিসিস প্রস্তাব ও পরীক্ষা করার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। মস্তিষ্কে স্বপ্নের উৎপত্তি কোথায়, স্বপ্নের একক উৎপত্তি হলে বা মস্তিষ্কের একাধিক অঞ্চল জড়িত থাকলে বা শরীর বা মনের জন্য স্বপ্ন দেখার উদ্দেশ্য কী তা জানা যায় না।

কিন্তু এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের জন্য স্বপ্ন নিয়ে কবিতা লিখেছেন। এখানে নিচে রয়েছে স্বপ্ন নিয়ে রবীন্দ্রনাথের ৩ টি বিখ্যাত কবিতা।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বপ্ন নিয়ে কবিতা:

স্বপ্ন

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

কাল রাতে দেখিনু স্বপন —
দেবতা – আশিস – সম শিয়রে সে বসি মম
মুখে রাখি করুণনয়ন
কোমল অঙ্গুলি শিরে বুলাইছে ধীরে ধীরে
সুধামাখা প্রিয় – পরশন —
কাল রাতে হেরিনু স্বপন ।
হেরি সেই মুখপানে বেদনা ভরিল প্রাণে
দুই চক্ষু জলে ছলছলি —
বুকভরা অভিমান আলোড়িয়া মর্মস্থান
কণ্ঠে যেন উঠিল উছলি ।
সে শুধু আকুল চোখে নীরবে গভীর শোকে
শুধাইল , “ কী হয়েছে তোর ?”
কী বলিতে গিয়ে প্রাণ ফেটে হল শতখান ,
তখনি ভাঙিল ঘুমঘোর ।
অন্ধকার নিশীথিনী ঘুমাইছে একাকিনী ,
অরণ্যে উঠিছে ঝিল্লিস্বর ,
বাতায়নে ধ্রুবতারা চেয়ে আছে নিদ্রাহারা —
নতনেত্রে গণিছে প্রহর ।
দীপ – নির্বাপিত ঘরে শুয়ে শূন্য শয্যা – পরে
ভাবিতে লাগিনু কতক্ষণ —
শিথানে মাথাটি থুয়ে সেও একা শুয়ে শুয়ে
কী জানি কী হেরিছে স্বপন
দ্বিপ্রহরা যামিনী যখন ।

(চৈতালি কাব্যগ্রন্থ)

স্বপ্ন হঠাৎ উঠল রাতে

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

স্বপ্ন হঠাৎ উঠল রাতে
প্রাণ পেয়ে,
মৌন হতে
ত্রাণ পেয়ে।
ইন্দ্রলোকের পাগ্‌লাগারদ
খুলল তারই দ্বার,
পাগল ভুবন দুর্দাড়িয়া
ছুটল চারিধার–
দারুণ ভয়ে মানুষগুলোর
চক্ষে বারিধার,
বাঁচল আপন স্বপন হতে
খাটের তলায় স্থান পেয়ে।

(খাপছাড়া কাব্যগ্রন্থ)

স্বপ্নে দেখি নৌকো আমার

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

স্বপ্নে দেখি নৌকো আমার
নদীর ঘাটে বাঁধা;
নদী কিম্বা আকাশ সেটা
লাগল মনে ধাঁধাঁ।
এমন সময় হঠাৎ দেখি,
দিক্‌সীমানায় গেছে ঠেকি
একটুখানি ভেসে-ওঠা
ত্রয়োদশীর চাঁদা।
“নৌকোতে তোর পার করে দে’
এই ব’লে তার কাঁদা।
আমি বলি, “ভাবনা কী তায়,
আকাশপারে নেব মিতায়–
কিন্তু আমি ঘুমিয়ে আছি
এই যে বিষম বাধা,
দেখছ আমার চতুর্দিকটা
স্বপ্নজালে ফাঁদা।’

(খাপছাড়া কাব্যগ্রন্থ)

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *